
দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: ২০২১ সালে, তার আগের বছরের অক্টোবরেই প্রয়াত হন বিহার ও কেন্দ্রীয় রাজনীতির প্রভাবশালী নেতা রামবিলাস পাসোয়ান। তাঁর মৃত্যুর পর পার্টিতে শুরু হয় ভগ্নদশা: রামবিলাসের ছেলে চিরাগ পাসোয়ান ও তাঁর চাচা পশুপতি কুমার পারসের মধ্যে তীব্র অন্তর্দ্বন্দ্ব। এই সংঘর্ষের ফলে চিরাগ নিজের দলে পদ হারান এবং রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়ে। পরবর্তীতে, এনডিএ-র শরিক হয়ে মন্ত্রী হন চিরাগের প্রতিদ্বন্দ্বী পশুপতি কুমার পারস। সেই ২০২১ সালেই চিরাগ বারবার নিজেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘হনুমান’ হিসেবে পরিচয় দেন।
কাট টু ২০২৫: ২০২৫-এর বিধানসভা নির্বাচনে চিরাগ পাসোয়ান কার্যত নিজেকে ‘হনুমান’ প্রমাণ করলেন। ফলপ্রকাশের দিন বিকেল ২টা পর্যন্ত তাঁর দলের স্ট্রাইক রেট ছিল ৭৫%। বিহারে এনডিএ তথা নীতীশ কুমারের ২০০ পারের সম্ভাব্য হিসাবের অন্যতম ভিত্তি তৈরি করেছেন চিরাগ।
চিরাগের গুরুত্ব কোথায়?
রামবিলাস পাসোয়ান বিহারের দলিত অংশের বড় মুখ ছিলেন। তাঁর দল এলজেপি দলিত এবং সংখ্যালঘুর একটি অংশের ভরসার জায়গা ছিল। পরে একদিকে দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং জেডিইউ ও আরজেডির ভাগাভাগির মাঝে ভোটের আসনের নিরিখে জমি হারিয়েছিল এলজেপি। বিহারের রাজনীতিতে LJP-এর প্রভাব বোঝার জন্য ২০২০ ও ২০২৫ সালের বিধানসভা ভোটের ফল পাশাপাশি রাখা প্রয়োজন। ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কোনও শিবিরে না গিয়ে একা লড়েছিল এলজেপি। ১৩৫টি আসনে একা লড়ে মাত্র ১টি আসনে জিতেছিল এলজেপি। ওই নির্বাচনে বড় ধাক্কা খেয়েছিল জেডিইউ, এক ধাক্কায় ২৮টি আসন কমে নেমে গিয়েছিল ৪৩-এ। এলজেপি আগেও দাবি করেছে, জাতপাতের ভিত্তিতে চলা ভোটের বিহারে সব আসনেই তাদের নির্দিষ্ট ভোট রয়েছে। এলজেপি একা লড়ায় সেই ভোট বেরিয়ে গিয়েছিল নীতীশের ঝুলি থেকে, ধাক্কা লেগেছিল ভোটবাক্সে। ২০২০-সালের তথ্যেও সেই ছবি দেখা গিয়েছিল। সে বার ইন্ডিয়া টুডে ডেটা ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-এর তথ্য ছিল, ভোট কাটাকাটির ফলে অন্তত ১২০টি আসনের ফল নির্ধারিত হয়েছে। বিশেষ করে তৃতীয় হওয়া প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট সেই কেন্দ্রে জয়ের মার্জিনে প্রভাব ফেলেছে। ওই ১২০টি আসনের মধ্যে ৫৪টিতেই ছিল এলজেপি প্রার্থীরা।
সেই এলজেপি- এ বার চিরাগের নেতৃত্বে এনডিএ জোটে থেকে বিহার বিধানসভার ভোটে লড়েছে। ১৪ নভেম্বর দুপুর পর্যন্ত যা রেজ়াল্ট, তাতে চমক দিয়েছে এলজেপি। ভোটের আগে কার্যত লড়াই করে শরিক হিসেবে ২৯টি আসন রেখেছিলেন চিরাগ। তার মধ্যে ২২টিতেই এগিয়ে তাঁর দল। আর অন্যদিকে এ বার জেডিইউ পেরিয়ে গিয়েছে ৮০, বিজেপি তারও বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনও পর্যন্ত যা ফলাফল, তাতে চিরাগের এলজেপি নিজে যেমন জিতেছে। তেমনই এনডিএ-জোট শরিকদের ঝুলিও উপচে দিয়েছে।
টানা লড়াই চিরাগের:
চিরাগের এই উত্থান অবশ্য একদিনে হয়নি। ২০২১ সালের ধাক্কার পরে নিজেই সংগঠনে মন দিয়েছিলেন চিরাগ। দলিত মুখ এবং তরুণ মুখকে পুঁজি করে রাজনীতির ময়দানে কাজ শুরু করেন তিনি। ২০২৪ সালে চিরাগের দল এলজেপি (রামবিলাস)-কে জোটসঙ্গী করে বিজেপি। বাবা রামবিলাসের গড় হাজিপুর থেকে লোকসভায় জিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছেন। এ বার রাজ্য রাজনীতিতেও ‘জাত’ ও ‘ক্ষমতা’, দু’টোই চেনালেন চিরাগ পাসোয়ান।
