দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ বিধানসভার ভোট হোক কিংবা লোকসভা নির্বাচন, অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় ভোটদানের হারে বরাবরই এগিয়ে থাকে বাংলা। কিন্তু এবারের লোকসভা ভোটে বাংলার ভোটাররা আগের মতো বুথমুখী না হওয়ায় রাজনৈতিক নেতাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। ভোটের হার কমায় শাসক না বিরোধী, কারা বেশি লাভবান হবেন, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিষয়টি নিয়ে এক একটি রাজনৈতিক দল একেক রকম ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও দ্বিধাবিভক্ত।
কমিশনের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, সোমবার পঞ্চম দফার ভোটে রাজ্যের মোট সাতটি লোকসভা আসনে গড়ে ভোট পড়েছে ৭৮.৪৫ শতাংশ। যা চতুর্থ দফার থেকেও কম। চতুর্থ দফায় রাজ্যের মোট আটটি লোকসভা আসনে ভোট হয়েছিল। সবমিলিয়ে ভোটদানের হার ছিল ৮০.২২ শতাংশ। গতবারের তুলনায় এই দফায় প্রায় ২ শতাংশ ভোট কম পড়েছে।
দেশের অন্যান্য অংশেও এবার ভোটদানের হার অপেক্ষাকৃত কম। পঞ্চম দফায় দেশের মোট ৪৯টি আসনে ভোট ছিল। তাতে মোট ভোট পড়েছে ৬০.০৯ শতাংশ। ভোটদানে বাংলা এখনও দেশে শীর্ষস্থানে থাকলেও গত লোকসভা এবং বিধানসভার তুলনায় এবার অনেক কম ভোট পড়া রাজনৈতিক মহলে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। ডান-বাম সব দলের নেতারাই বিষয়টিকে খুব একটা ভাল চোখে দেখছেন না। ভোটারদের মধ্যে এই নিরুৎসাহ দেখে একদিকে যেমন চিন্তায় পড়েছেন কমিশনের কর্তারা, তেমনি অন্যদিকে এতে কারা বেশি লাভবান হবেন, সেই হিসেব কষতে ব্যস্ত রাজনৈতিক দলগুলি।
সাধারণ ভাবে দেখা যায় ভোটদানের হার যদি কমে তাহলে শাসক দলেরই ক্ষতি বেশি হয়। ভোটদানের হার কমার পিছনে একটা কারণ হতে পারে, যারা বর্তমানে ক্ষমতায় আছেন তাদের প্রতি হয়তো একটা অংশের মানুষ অসন্তুষ্ট। যে সব মানুষরা এদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছিলেন, অসন্তোষের কারণে তাঁরা হয়তো এখনই নিজের দল চেঞ্জ করছেন না, কিন্তু তাঁরা ক্ষোভে ভোটটাও দিতে যাচ্ছেন না।
আইএসআইয়ের অধ্যাপক শুভময় মৈত্র বলেন, ‘ভোটদানের হারের সঙ্গে আসন সংখ্যা কখনই সরলরৈখিক নিয়মে চলে না। একটা চালু ধারণা রয়েছে যে, সকালের দিকে যদি বেশি ভোট পড়ে তাহলে ধরে নিতে হবে লোকে সরকারকে পাল্টাতে চাইছে। কিন্তু সেটা সবক্ষেত্রে হয় না। তাই এ বিষয়ে কোনও স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছনো মুশকিল।’
বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘ভোটের হার কমাটা গণতন্ত্রের পক্ষে মোটেও শুভ নয়। এই মুহূর্তে বহু মানুষ ভোটের প্রতি উৎসাহ হারাচ্ছেন। তার কারণ, সারাদেশে বিরোধীরা এতটাই দুর্বল যে এবারের ভোটে সত্যিকারের কোনও প্রতিযোগিতাই হচ্ছে না।’
তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা যুক্তি, ‘কত মানুষ ভোট দিল তার উপর গণতন্ত্রের সাফল্য-ব্যর্থতা নির্ভর করে। এটা গণতন্ত্রের পক্ষে একেবারেই মঙ্গলজনক নয়। তবে এবার ভোটের হার কমার পিছনে গরম একটা বড় ফ্যাক্টর ছিল।’ তাঁর দাবি, ‘এ রাজ্যে বিজেপি’র তুলনায় তৃণমূলের সংগঠন অনেক বেশি শক্তিশালী। তাই তৃণমূলের ভোট কমার সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া এটা লোকসভার ভোট। কেন্দ্রীয় সরকার মানুষের আস্থা হারিয়েছে বলেই হয়তো অনেকে ভোট দিতে উৎসাহ দেখাচ্ছে না।’
কমিশনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘ভোটদানের হার কমায় কারা রাজনৈতিক ভাবে লাভবান হবে, সেটার থেকেও আমাদের কাছে যেটা চিন্তার বিষয় তা হলো, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মানুষের উৎসাহে ভাঁটা পড়ছে। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে ভোটদানের হার কমাটা যথেষ্ট অ্যালার্মিং। এটা আমাদেরও ভাবাচ্ছে।’