দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ আপনি যদি শান্তিনিকেতন, বোলপুর ঘুরে থাকেন অথচ এই জায়গাটিতে না যান তাহলে আপনি খুব বড় বিষয় মিস করেছেন। বোলপুর গেলে একবার আপনাকে ঘুরে আসতেই হবে এই জায়গা থেকে। এই বাড়ির ইতিহাস জেনে তাজ্যব হয়ে যাবেন আপনি। কিভাবে যাবেন সুরুলের জমিদার বাড়ি? এবং কি দেখবেন এখানে গিয়ে? আসুন জেনে নেওয়া যাকঃ
এই বাড়ির ইতিহাস অনুসারে একসময় বর্ধমানের ছোট নীলপুরের ঘোষবাড়ির ছেলে ভরতচন্দ্র স্ত্রী বিমলা দেবীকে নিয়ে চলে আসেন সুরুলে। গুরু বাসুদেব ভট্টাচার্যের বাড়িতে সন্তান লাভের আশায় আশ্রয় নেন দু'জনে। সুরুল ছিল বৈষ্ণব ধর্মগুরু বাসুদেবের শ্রীপাট। গুরুদেবের নির্দেশেই ভরতচন্দ্র থেকে যান সুরুলে। আর বর্ধমানে ফিরে যাননি। তাঁর পুত্র কৃষ্ণহরি ও তাঁর ছেলেরা সেই সময়ে ফরাসি ও ইংরেজ কুঠিয়ালদের সঙ্গে ব্যবসা করে পরিবারের শ্রীবৃদ্ধি করেন। তাঁর আমলেই নির্মিত হয় পঞ্চরত্ন মন্দির। পরবর্তীকালে অবশ্য সম্পত্তির দাপটে তাঁকে টেক্কা দিয়েছিলেন নাতি শ্রীনিবাস। পাঁচ খিলানের একটি ঠাকুরদালান নির্মাণ করিয়েছিলেন তিনি। সে যুগে খরচ পড়েছিল প্রায় আঠারো হাজার টাকা! ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, সুরুলের স্থানীয় বাণিজ্যকুঠিতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রেসিডেন্ট জন চিপ সাহেবের সঙ্গে ব্যবসা করে সম্পদ বৃদ্ধি করেছিল সরকার পরিবার। জাহাজের পাল তৈরি হত যে কাপড় দিয়ে, সেই কাপড়, নীল চাষ এর পাশাপাশি অন্যান্য ব্যবসা ছিল তাঁদের। কৃষ্ণহরির মৃত্যুর পরে তাঁর তিন ছেলে যাদবেন্দ্র, মাধবেন্দ্র ও কালীচরণের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে সমস্যা এতটাই তুঙ্গে ওঠে যে, জমিদারি ভাগ হয়ে গিয়েছিল। যাদবেন্দ্র ও কালীচরণ একসঙ্গে থাকেন আদি বাড়িতে। লোকমুখে তাঁরা ‘বড় তরফ’। পাশেই বাড়ি করে আলাদা হয়ে যান মাধবেন্দ্র। তিনি ‘ছোট তরফ’-এর প্রতিষ্ঠাতা।
মূলত এই জমিদার বাড়ি বোলপুরের মধ্যে অবস্থিত। এই জমিদার বাড়ি বিশ্ব বিখ্যাত দুর্গাপুজোর কারণে। দুর্গাপুজোর সপ্তমীর দিন দোলা নিয়ে পুকুর ঘাটে ঘট ভরতে যাওয়া থেকে শুরু হয়ে যায় জাকজমক ভাবে শুরু হয় দুর্গাপুজো। দূর দুরান্ত থেকে বহু মানুষ এই দুর্গা পুজো দেখতে ভিড় জমান জমিদার বাড়িতে।এ ছাড়াও লক্ষ্মী পুজো এবং অন্যান্য দেবদেবীর নিত্যপুজো হয় প্রতিদিন।
আপনি যদি ইতিহাস জানতে আগ্রহী হন তাহলে বোলপুর ঘুরতে এসে এই জমিদার বাড়ি ঘুরে যেতে পারেন। নানান অজানা ইতিহাসের ছোঁয়া মিলবে এই জমিদার বাড়ির আনাচে কানাচে। জমিদার আমলে তৈরি বড় বড় জানলা থেকে শুরু করে দরজা সবকিছুর মধ্যেই পাবেন জমিদার বংশের ছোঁয়া। বোলপুর স্টেশন থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই জমিদার বাড়ি।