দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃনাড়াজোল রাজবাড়ি। ৬০০ বছরের প্রাচীন ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে এই রাজবাড়ির সঙ্গে। কলকাতার কাছেই যে এমন একটি জায়গা রয়েছে তা অনেক পর্যটকের কাছেই অজানা। যাঁরা একটু ঐতিহাসিক জায়গায় ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন তাঁদের জন্য এই নাড়াজোল রাজবাড়ি সেরা জায়গা হয়ে উঠতে পারে।
বেশ একটা গাছমছমে অনুভূতি রয়েছে এই রাজবাড়ির চারপাশে। মোটা মোটা থাম। কড়িবরগার ছাদ। চুন সুড়কির দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। তাতে গজিয়ে উঠেছে বট, পাকুর, অশ্বত্থের গাছ। প্রাচীন এই রাজবাড়ির অলিন্দে কান পাতলে শোনা যায় ৬০০ বছরের প্রাচীন ইতিহাসের কথা।
রাজবাড়ি পুরাতন হলেও তার নিরাপত্তা এখনও সুনিশ্চিত করে চলেছে পরিখা। রাজবাড়িকে দুটি ভাগে ভাগ করেছে এই পরিখা। অন্তর্গড় আর বহির্গড়। নাড়জোল রাজবংশের সূচনা করেছিলেন উদয়নারায়ণ ঘোষ। শোনা যায় তিনি বর্ধমানের রাজার দেওয়ান ছিলেন। নাড়াজোল শব্দ দুটি পৃথক শব্দের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে। ধান গাছ কাটার পর জমিতে যে অংশটি পড়ে থাকে মেদিনীপুরের লোকেরা তাকে বলেন নাড়া। আর জোল জেলা শব্দের অপভ্রংশ। দুয়ে মিলে নাড়াজোল।
স্থানীয়দের কাছে অনেক গল্প শুনতে পাবেন এই রাজবাড়ির। সেগুলি কম রোমহর্ষক নয়। শোনা যায় উদয়নারায়ণ শিকার করতে এসে জায়গাটির সন্ধান পেয়েছিলেন। পরের দিন রাতে দেবী দুর্গার স্বপ্নাদেশ পেয়ে সেখানে ফিরে যান এবং প্রচুর সোনার সম্পদ এবং সোনার মূর্তি উদ্ধার করেন। তারপরেই সেখানে পাকাপাকিভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি দেবী জয়দুর্গার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই নাড়াজোলে। এখনও দেবী পুিজত হন এই রাজবাড়ির অন্দরে।
রাজবাড়ির অনেকটা অংশ এখন দেখাশোনার অভাবে জীর্ণদশায় চলে গিয়েছে। কিন্ত এখনও রাজবাড়ি চত্বরে ঘুরে বেড়ালে সেই সময়ের ইতিহাস যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। তেমন ভাবে রাজবাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না এখন। যাঁরা বংশধর রয়েছেন তাঁরা প্রতিবার কিন্তু পুজো করেন মহা ধুমধাম করে। চাইলে দুর্গাপুজোর সময়ও এখানে আসতে পারেন। অসম্ভব সুন্দর জায়গাটি।
রাজবাড়ির ভেতরে মন্দিরে মা দুর্গার মূর্তি রয়েছে। তবে এই দুর্গামূর্তির সঙ্গে কোনও লক্ষ্মী-সরস্বতী, কার্তিক-গণেশ নেই। একক দুর্গার মূর্তিই পূজিত হয় এখানে। দুর্গাপুজোর কয়েকদিন এখানে নিষ্ঠাভরে পুজো করা হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাচীন পুজো গুলির মধ্যে একটি এই নাড়াজোল রাজবাড়ির পুজো। কাজেই দুর্গাপুজোতেও এই জায়গাটি বেড়ানোর সেরা। যাঁরা রাজবাড়ির পুজো দেখতে পছন্দ করেন তাঁদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে এই নাড়াজোল রাজবাড়ি।