kolkata

3 months ago

Lok Sabha Election 2024:চব্বিশের ভোটের ব্যবধান বেড়েছে,দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে জোর টক্কর, আশ্বস্ত তৃণমূল

Abhishek with Chief Minister Mamata Banerjee
Abhishek with Chief Minister Mamata Banerjee

 

 দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। কিন্তু বাকি শরিকদের সমর্থনে এনডিএ সরকার গড়ে উঠবে। এটা সত্যিই প্রকৃত এনডিএ সরকার। কারণ বিজেপি এখন সংখ্যালঘু। এই আবহে বাংলার দিকে তাকালে বিজেপি জিতেছে ১২টি আসন। আগের বারের থেকে ৬টি আসন কমেছে। আর এই আবহে দেখা যাচ্ছে, লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে সবুজ–ঝড় অব্যাহত। দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্র থেকে আবার জিতলেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মালা রায়। কিন্তু খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা কেন্দ্রেই এবার জোড়াফুল শিবিরের সঙ্গে সরাসরি টক্কর দিল পদ্মফুল শিবির। এই বিষয় আগে কখনও ঘটেনি।কিন্তু এ বারের ভোটের ফলাফলে অনেক বেশি ‘তৃপ্ত’ দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। কারণ, এ বারের লোকসভা নির্বাচনে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রেই ভাল ব্যবধানে এগিয়েছেন তাঁরা।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরে ভোট এবং এগিয়ে থাকার ব্যবধান বাড়িয়েছে তৃণমূল। ২০১৯ সালে বিজেপির থেকে তৃণমূল ভবানীপুরে এগিয়েছিল ৩,১৬৮ ভোটে। এ বার সেই ব্যবধান বেড়ে হয়েছে ৮,২৯৭ ভোট। ২০১৯ সালের তুলনায় মেয়র ফিরহাদ হাকিমও তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ব্যবধান বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন। ২০১৯ সালের ৩৬,২৩৯ ভোটের ব্যবধান এ বারের ভোটে বেড়ে হয়েছে ৪২,৮৯৩ ভোট। মন্ত্রী জাভেদ খানের কেন্দ্র কসবা বিধানসভায় গত লোকসভা নির্বাচনে ব্যবধান ছিল ৩৪,৬৪১। সেই ব্যবধান বেড়ে হয়েছে ৪৬,৮৫০।

তৃণমূলের স্বস্তির আরও কারণ হল, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় সব বিধানসভা কেন্দ্রেই ব্যবধান বাড়াতে সফল হয়েছে তারা। ২০১৯ সালের ভোটে রাসবিহারী কেন্দ্র থেকে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু সেই রাসবিহারী কেন্দ্রে এ বার বিজেপিকে পিছনে ফেলে দিয়েছে শাসকদল। ওই কেন্দ্রে ১,৬৯১ ভোটে জিতেছে তারা। ঘটনাচক্রে, ২০১৯ সালে এই কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। আর এখন এই কেন্দ্রের বিধায়ক দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূলের সভাপতি দেবাশিস কুমার। তাই জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের লক্ষ্য ছিল যেন তেন প্রকারেণ এই বিধানসভা থেকে মালাকে এগিয়ে দেওয়া। কারণ, মালা নিজেও রাসবিহারী বিধানসভার অধীন ৮৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। গত লোকসভা ভোটে যখন এই আসনে বিজেপি এগিয়ে গিয়েছিল, তখন দলের একাংশের প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন জেলা নেতৃত্ব। এ বার রাসবিহারীর ফলাফলের নিরিখে ‘স্বস্তি’ জেলার নেতাদেরও।

দক্ষিণ কলকাতা লোকসভার অন্তর্গত বালিগঞ্জ বিধানসভায় ২০১৯ সালে তৃণমূল প্রার্থী মালা এগিয়ে ছিলেন ৫৪,৪৫২ ভোটে। এ বার সেই ব্যবধান বেড়ে ৫৬,১১৩ ভোট হয়েছে। বেহালা পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের ফলাফলের দিকে নজর ছিল রাজনীতির কারবারিদের। কারণ, এই বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রায় দু’বছর ধরে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে জেলবন্দি। গত লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের পক্ষে ব্যবধান ছিল ১৬,১৬৫। এ বার সেই ব্যবধান অবশ্য খানিকটা কমেছে। বেহালা পশ্চিমে ১৫,১৯৬টি ভোটে এগিয়ে রয়েছেন মালা। গত বারের তুলনায় ৯৬৯ ভোটের ব্যবধান কমেছে তৃণমূলের। পার্থের অনুপস্থিতিতে স্থানীয় তৃণমূল নেতা অঞ্জন দাসকে সামনে রেখে মূলত কাউন্সিলরদের ভোট পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই পরীক্ষায় ‘উত্তীর্ণ’ হয়ে স্বস্তিতে বেহালার তৃণমূল নেতৃত্বও। অঞ্জনের কথায়, ‘‘বিধানসভা ভোট আর লোকসভার ভোট আলাদা। গত লোকসভা ভোটের নিরিখে আমরা হাজারখানেক মতো ভোটে পিছিয়ে পড়েছি ঠিকই। তবে যে ভাবে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির পর রাজ্য জুড়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিরোধীরা সরব হয়েছিল, তাতে যে বেহালার মানুষ সে ভাবে সাড়া দেননি, এই ফল তার প্রমাণ। নইলে আমরা এই বিধানসভায় পিছিয়ে যেতে পারতাম। আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, মালাদির পক্ষে ভাল ব্যবধান আনা। সেই কাজে আমরা সফল। দুর্নীতির অভিযোগের ফলে এ বারের ভোট পরিচালনা আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই নিরিখে বেহালা পশ্চিমের তৃণমূল নেতারা সফল হয়েছেন বলেই আমরা মনে করি।’’

প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের প্রাক্তন বিধানসভা কেন্দ্র বেহালা পূর্বে মালা ১৫,২২৬ ভোটে এগিয়ে রয়েছেন। গত লোকসভা নির্বাচনে ওই কেন্দ্রে ১৫,৮৫৮ ভোটে এগিয়েছিলেন তিনি। এ ক্ষেত্রেও ব্যবধান সামান্য কমেছে তৃণমূলের। তবে সার্বিক ভাবে ফলাফল তাঁদের পক্ষে যাওয়ায় দক্ষিণ কলকাতা থেকে নির্বাচিত এক বর্ষীয়ান তৃণমূল কাউন্সিলর বলেন, ‘‘আমরা এই ফলাফলে খুশি। তবে কিছু ক্ষেত্রে খামতিও ধরা পড়েছে। ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে সেই খামতিগুলি মেরামত করতে হবে।’’

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের নিরিখে দক্ষিণ কলকাতার অন্তর্গত তিনটি কেন্দ্রে ব্যবধান কমেছে। সেগুলি হল ফিরহাদের বন্দর কেন্দ্র, ভবানীপুর, কসবা এবং বেহালা পশ্চিম। শাসক শিবিরের অনেকের মতে, বিধানসভা ভোট হওয়ায় ওই কেন্দ্রগুলিতে অনেক বেশি ভোট পড়েছিল। কারণ, সেখানে রাজ্যের সরকার গঠনের বিষয় ছিল। লোকসভা ভোট দেশের সরকার গঠনের। সেই কারণে ভোট তুলনায় খানিকটা কম পড়ে থাকতে পারে। সম্পূর্ণ পরিসংখ্যান হাতে এলে বিষয়টি আরও ভাল করে খতিয়ে দেখা হবে। তবে দলের অন্য একাংশের বক্তব্য, দক্ষিণ কলকাতার সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে থাকলেও ওই চারটি কেন্দ্রের কথা ভেবে ‘আত্মতুষ্ট’ হওয়া উচিত হবে না। ফলাফল কাটাছেঁড়া করে আগামী বিধানসভা ভোটের আগে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে শাসক শিবিরকে। বিশেষত, বেহালা পশ্চিম আসনে আগে থেকেই কাজ শুরু করতে হবে। পার্থ যে সেখানে আর টিকিট পাবেন না, তা নিশ্চিত। ‘বিকল্প’ প্রার্থী তৈরি করে ‘ক্ষত’ মেরামত করতে এখন থেকেই হাত দিতে হবে বলে দলের এই অংশ মনে করছে।

You might also like!