দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ রাস্তা চলেচে যত অজগর সাপ, পিঠে তার ট্রামগাড়ি পড়ে ধুপ্ ধাপ্।’তারই আজ ১৫০ তম জন্মদিন! কিন্তু তার পর... বড়ো একটা জিজ্ঞাসা চিহ্নের মুখে আজ ট্রামের অস্তিত্ব।কলকাতার ঐতিহ্য, কলকাতার আভিজাত্যের অন্যত্তম প্রতীক এই ট্রাম। কলকাতার প্রেম হোক সিনেমা হোক অথবা গান বা কবিতা তার আনাচে কানাচে ঢুঁ মারলে দেখব সেই ট্রামের আনাগোনা, অথচ সংস্কার ও উদ্যোগের অভাবে তার অবস্থা আজ রুগ্নপ্রায়। রবীন্দ্রনাথ কলকাতাকে বর্ননা করতে গিয়ে ট্রামের কথা বলেছিলেন , তবে কেবলমাত্র রবি ঠাকুর নন , আধুনিক কবিদের মধ্যে কবি জীবনানন্দ দাস ‘সারা দিন ট্রাম-বাস’ নামে একটি আস্ত কবিতাই লিখেছিলেন।এর পাশাপাশি অমিয় চক্রবর্তী, প্রেমেন্দ্র মিত্র, বুদ্ধদেব বসুর কবিতাতেও উঠে এসেছে ট্রামের কথা।
তবে কেবল বই-র পাতায় নয় সিনেমার পর্দাতেই পুরানো কলকাতাকে তুলে ধরতে সত্যজিৎ রায় থেকে শুরু করে সুজিত সরকার সকলেই তাদের চিত্রনাট্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে স্থান পেয়েছে ঐতিহ্যবাহী ট্রাম। ট্রামের ইতিহাস এক আধটা দিনের নয়। ১৮৭৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ান ওয়েলার ঘোড়ায় টানা প্রথম মিউনিসিপ্যাল ট্রামওয়ে চলেছিল কলকাতায়। তার যাত্রাপথ ছিল শিয়ালদহ স্টেশন থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত। যদিও লোকসানের জেরে ওই বছরেরই ২০ নভেম্বর চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর পরে ১৮৭৯ সালের ক্যালকাটা ট্রামওয়ে কোম্পানি ও কর্পোরেশনের মধ্যেকার চুক্তি অনুযায়ী ১৮৮০ সালের ২৭ নভেম্বর রাজপথে ঘোড়ায় টানা ট্রাম চলাচল শুরু হয়।কিন্তু পশুপ্রেমীদের তরফে অভিযোগ আসে। এরপর ১৮৮২ সালে কলকাতায় প্রথম স্টিমচালিত ট্রাম আসে, তার যাত্রাপথ ছিল চৌরঙ্গি ও খিদিরপুর রুটে।
১৯০২ সাল নাগাদ চালু হয় বিদ্যুৎচালিত ট্রাম,যা এশিয়ায় প্রথম
বৈদ্যুতিক ট্রাম পরিষেবা।বছর দশেক আগেও শহরে ৩৭টি ট্রামের রুট ছিল। কিন্তু বর্তমানে মাত্র দু’টি রুটে
এই পরিসেবা চালু রয়েছে সেগুলি হল বালিগঞ্জ থেকে
টালিগঞ্জ এবং ধর্মতলা থেকে গড়িয়াহাট। আজ আধুনিকতার ছোঁয়া
লেগেছে ট্রামে , সুসজ্জিত এক কামরার ট্রাম
সত্যিই মনোরম, কিন্তু তাও আক্ষেপ দেড়শো বছর ধরে কলকাতা শহরের গৌরব বর্ধন করে ও হেরিটেজ তকমা
জোটেনি তার, প্রসঙ্গত ইউনিসেফের হেরিটেজ তকমা পেতে হলে যে সব ধারা
রয়েছে, তাতে একটি হচ্ছে চালুর পরে কখনও এর পরিসেবা বন্ধ
করা যাবে না ? কলকাতায় তা হয়নি। সাধারণের
উপকারেও লাগতে হবে , ট্রাম তো দেড়শো বছর
ধরে সাধারণকেই পরিষেবা দিয়ে এসেছে।প্রযুক্তিগত ভাবে সম্পূর্ন বদল করা যাবে না। সেটাও হয়নি কলকাতায়।তবে কেন ট্রামের এই স্বপ্ন ভঙ্গ?
ভারতের বিভিন্ন রেল, যেমন সিমলা-কালকা থেকে দার্জিলিঙের টয় ট্রেন হেরিটেজ
তকমা পেয়েছে। যে শর্তে তারা
ওই তকমা পেয়েছে, তার সবগুলি পূরণ করতে পারলেও ট্রামের ক্ষেত্রে একটি বাধা রয়েছে। তা হল— এর
পরিচালনকারী কর্তৃপক্ষকে বলতে হবে, ভবিষ্যতেও পরিষেবা চালু থাকবে।
রাজ্য পরিবহণ দফতর সেই নিশ্চয়তা দিয়ে আবেদন করলে তবেই হেরিটেজ তকমা পাওয়া যায়।উলেক্ষ্য রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী অবশ্য আশার বানী শুনিয়ে বলেছেন ট্রাম তুলে দেওয়া হবে না বলেই আশবাস
দিয়েছেন । দুর্গাপুজোর মতো
ট্রামও যাতে হেরিটেজ তকমা পায়, তা-ও তিনি
চান বলেই জানিয়েছেন। ক’দিন আগেই
বিধানসভায় কলকাতার ট্রামকে বাঁচিয়ে রাখার আর্জি জানিয়েছেন স্বয়ং স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। সে আর্জি মানবেন
বলে কথা দিয়েছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ট্রামকে বাঁচিয়ে রাখার কথা বলেছেন মন্ত্রী স্নেহাশিসও। কেন্দ্রীয় উদ্যোগের জন্য চেষ্টার আশ্বাস দিয়েছেন সাংসদ লকেট। এর পরে কি
কলকাতার ট্রাম ফিরে পাবে তার গরিমা? যদিও এ শহর আশাবাদী
, শহর বাসীর বিশ্বাস ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে নিজের অস্তিত্বকে নিয়ে মাথা তুলে টং টং ধবনি
তুলে কালো পিচের রাস্তার চকচকে রুপোলি লাইন ধরে চলতে চলতে ঠিক একদিন সে জয় করে
নেবে সেরার তকমা।