দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ 'ভারতবর্ষকে বিশ্ব শ্রেষ্ঠ দেশ হিসেবে গঠন করতে চাইলে দেশের নাগরিক জীবনে নাগরিক কর্তব্যকে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। দেশের নাগরিকরা রাষ্ট্রের প্রতি নিজ নিজ কর্তব্যকে প্রাধান্য দিতে হবে। নাগরিক কর্তব্যকে উপেক্ষা করে একটি দেশ কখনও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারে না। তাই শ্রেষ্ঠ দেশ গঠন করতে হলে নাগরিক কর্তব্যকে অগ্রাধিকার দিতে হবে'। শিলচরের শুভশ্রী বিবাহ ভবনে বিদ্যা ভারতী দক্ষিণ আসাম প্রান্তের বার্ষিক সাধারণ সভায় উপস্থিত হয়ে একথাগুলো বলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ দক্ষিণ আসাম প্রান্তের প্রান্ত প্রচারক গৌরাঙ্গ রায়। তিনি আরোও বলেন, আগামী বৎসর রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ শতবর্ষ পূর্ণ করবে। এ উপলক্ষে সংঘ পঞ্চ পরিবর্তনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। এর মধ্যে প্রথমটি সামাজিক সমরসতা অর্থাৎ সকল ধরনের ভেদাভেদ দূর করে সবাইকে একসাথে নিয়ে চলা, দ্বিতীয়টি প্ররিবার প্রবোধন, তৃতীয়তঃ পরিবেশ সংরক্ষণ। এতে বৃক্ষ রোপন, জল সংরক্ষণ ও পলিথিন বর্জন করার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। চতুর্থতঃ প্রতিদিনকার জীবনে স্বদেশী দ্রব্যের ব্যবহারের প্রতি সচেষ্ট হওয়ার কথা বলা হয়েছে ও পঞ্চমতঃ নাগরিক কর্তব্য পালনের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, শিলচরের শুভশ্রী বিবাহ ভবনে বিদ্যা ভারতী দক্ষিণ আসাম প্রান্তের বার্ষিক সাধারণ সভার আয়োজন করা হয়। সভায় পৌরহিত্য করেন শিক্ষা বিকাশ পরিষদের সভাপতি তথা অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত ডিন প্রফেসর নিখিল ভূষণ দে। এদিন প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে সভার সূচনা করা হয়। সভার শুরুতে পরিবেশিত হয় সরস্বতী বন্দনা, এরপর অতিথিদের উত্তরীয় ও চন্দনের ফোঁটা দিয়ে বরণ করা হয়। পরে বিগত দিনে পরলোকগত বিদ্যা ভারতী দক্ষিণ আসাম প্রান্তের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এক মিনিট নীরবতা পালন করে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করা হয়। পরে বিগত সভার সিদ্ধান্ত পাঠ করেন কার্যালয় সচিব অয়ন চক্রবর্তী। সম্পাদক নীহারেন্দু ধর সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পাঠ করেন। কোষাধ্যক্ষ কৌশিক কুমার দে বিগত কার্যকালের আয় ব্যয় ও আগামী বাজেট উপস্থাপন করলে সভা তা অনুমোদন করে। এরপর বিদ্যা ভারতী দক্ষিণ আসাম প্রান্তের প্রান্ত সমিতি শিক্ষা বিকাশ পরিষদের চলমান সমিতির তিন বৎসরের কার্যকাল সম্পূর্ণ হওয়ায় সভাপতি নিখিল ভূষণ দে সমিতি ভঙ্গ করেন ও নতুন সমিতি গঠনের প্রস্তাব করেন।
সভার দ্বিতীয় পর্বে কাবুগঞ্জ জনতা কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ দক্ষিণ আসাম প্রান্তের প্রান্ত কার্যবাহ সুভাষ চন্দ্র নাথের তত্ত্বাবধানে নতুন সমিতি গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। এতে বিদায়ী সমিতির সম্পাদক তথা শিলচর এনআইটি-র ডেপুটি রেজিস্ট্রার নীহারেন্দু ধরকে সভাপতি মনোনীত করা হয়। সমিতির সংরক্ষক হিসেবে প্রফেসর নিখিল ভূষণ দে, শিল্পপতি অসীত দত্তকে মনোনীত করা হয়। সহ সভাপতি হিসেবে সোনাই উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অপূর্ব কুমার নাথ, করিমগঞ্জ কলেজের অধ্যাপক ডঃ মালবিকা ভট্টাচার্য ও আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর দিপ্যেন্দু দাসকে মনোনীত করা হয়। নবগঠিত সমিতিতে রামকৃষ্ণ নগর কলেজের অধ্যাপক ডঃ দীপংকর পালকে সম্পাদক করে, মিতালিনী থাওসেন, কৌশিক কুমার দে ও বিশ্বজিৎ নাথকে সহ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত করা হয়। পরে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরত এগারো জন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গকে কার্যকরী সদস্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়। সমিতির কোষাধ্যক্ষ হিসেবে চন্দ্রকান্ত দাসকে মনোনীত করা হয়। এছাড়াও মহেশ ভাগবতকে পুনরায় সংঘটন সম্পাদক করে করিমগঞ্জ সরস্বতী বিদ্যা নিকেতনের প্রধান আচার্য অঞ্জন গোস্বামীকে প্রান্তীয় নিরীক্ষক ও বদরপুর মহর্ষি সন্দিপন বিদ্যাপীঠের প্রধান আচার্য পিংকু মালাকারকে প্রান্তের প্রশিক্ষণ প্রমুখ হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। পরে তিন বৎসরের জন্য নির্বাচিত কার্যকারী সমিতির সকল কর্মকর্তাদের শুভেচ্ছা জানান বিদ্যা ভারতী পূর্বোত্তর ক্ষেত্রের সংঘটন মন্ত্রী ডঃ পবন তিওয়ারি। তিনি তাঁর বক্তব্যে বিদ্যা ভারতীর লক্ষ্য সম্পর্কে আলোচনা করেন। এছাড়াও রাষ্ট্রীয় শিক্ষা নীতি ২০২০ এর আধারে বিদ্যালয়গুলিকে বিকশিত করার কথা বলেন। তিনি আরোও বলেন, বিদ্যাভারতীর কাজ দক্ষিণ আসাম প্রান্তে এক নতুন গতি লাভ করেছে, প্রতিকূল পরিস্থিতি থাকা সত্ত্বেও এই প্রান্তে কর্মকর্তা দের পরিশ্রমে সংঘটনের কাজ দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী দিনে নবীন ও প্রবীণ সকল কর্য্যকর্তার সামগ্রিক প্রচেষ্টায় এই প্রান্তের কাজ আরোও বৃদ্ধি হবে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি। সভার শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কাঠলিছড়া এসকে রায় কলেজের অধ্যাপক তথা শিক্ষা বিকাশ পরিষদের প্রাক্তন সহ সম্পাদক ডঃ দেবজিত দে। পরে বন্দেমাতরম্ রাষ্ট্র গীতের মাধ্যমে সভা সমাপ্ত হয়। এদিনের সভায় কাছাড়, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দী ও ডিমাহাসাও জেলা সহ লামডিং-এ বিদ্যা ভারতী পরিচালিত বিদ্যালয় গুলির পরিচালন সমিতির সভাপতি, সম্পাদক ও প্রধান আচার্যরা অংশগ্রহণ করেন।