দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ সুন্দরবনের মহিলাদের হাত ধরে রাজ্য বনদপ্তরের কোষাগারে হচ্ছে বিপুল লক্ষ্মীলাভ। নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর এই দুমাসে শুধু মধু বিক্রি করে ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশনের ঘরে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা তুলে দিয়েছেন এই সুন্দরী কন্যারা।
সুন্দরবনের বাসিন্দাদের বাঘ-কুমিরের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে হয়। তার উপর রয়েছে প্রকৃতির রোষ। আয়লা, বুলবুল, আমফান থেকে যশ, একের পর এক ঝড়ে ক্ষতবিক্ষত দ্বীপাঞ্চল। রুজিরুটি বলতে মধু সংগ্রহ, মীন, মাছ, কাঁকড়া ধরে যেটুকু আয় হয়। পেটের টানে ঝুঁকি নিয়ে তাই বাঘের মুখে যেতে হয় এখানকার বাসিন্দাদের। বনদপ্তরের নজর এড়িয়ে অনেকে গভীর জঙ্গলে ঢুকে পড়েন। সেখান ঢুকে অনেকেই ফিরে আসতে পারেন না। বাঘের কামড়ে মৃত্যু রুখতে দ্বীপের বাসিন্দাদের স্বনির্ভর করে তুলতে বিকল্প জীবিকার উপর জোর দিচ্ছে রাজ্য সরকার। সেই জন্যই সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভের সজনেখালি রেঞ্জে স্বনির্ভর গোষ্ঠী মহিলাদের দিয়ে মধু বিক্রি করছে ডব্লুবিএফডিসি।
এর আগে এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা পটচিত্র তৈরি করতেন। কিন্তু পর্যটকদের কাছে সুন্দরী কন্যাদের তৈরি পটচিত্র ব্যাপক সাড়া ফেলতে পারেনি। সুন্দরবনের মধুর চাহিদার কথা মাথায় রেখে ডব্লুবিএফডিসি সজনেখালিতে মহিলাদের দিয়ে ‘মৌবন’-এর স্টল চালু করে। গত নভেম্বর থেকে এই স্টল চালু হয়েছে। মহিলারা বনদপ্তরের মধু পর্যটকদের কাছে বিক্রি করছেন। সুন্দরবন বারোমাসই পর্যটকদের জন্য খোলা রয়েছে। তবে অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত পর্যটকদের ভিড় বেশি থাকে। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের দর্শন পেতে দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা বারবার ছুটে আসেন ম্যানগ্রোভে ঘেরা এই দ্বীপে। পর্যটকদের হাতে খাঁটি সুন্দরবনের মধু তুলে দিচ্ছেন মহিলারা।
মউলিদের কাছ থেকে বনদপ্তর মধু কিনে নেয়। সেই মধু পরিস্রুত করে বিক্রি করে থাকে ডব্লুবিএফডিসি। ‘মৌবনি’ নামে বনদপ্তরের এই মধু পাওয়া যাচ্ছে। ডব্লুবিডিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সুন্দরবনের খাঁটি মধুর চাহিদা রয়েছে। কর্পোরেশন থেকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের বিনামুল্যে দেওয়া মধু দেওয়া হচ্ছে। নভেম্বর ও ডিসেম্বর এই দু’মাসে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা মধু বিক্রি করেছে সজনেখালির মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী। এই লভ্যাংশ থেকে তাঁদের একটা ভাগ দেওয়া হয়।
সম্প্রতি GI তকমা পেয়েছে সুন্দরবনের মধু। আন্তর্জাতিক বাজারেও চাহিদা বাড়বে। মধু বিক্রি করে সুন্দরবনের মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা করা যাবে বলে মনে করছে বনদপ্তর। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য মধুশ্রী দাস বলেন, ‘‘পটচিত্রের বিক্রিবাটা একদম ছিল না। তবে মধু বিক্রি করে আমরা উপকৃত হচ্ছি। এখন সুন্দরবনে পর্যটকদের ভিড় বেশি। মধুও ভালো বিক্রি হচ্ছে। এখন আমরা কিছুটা উপকৃত হচ্ছি। প্রতি কেজি মধুর দাম ৭০০ টাকা। এক কেজি মধু বিক্রি করলে ১০০ টাকা করে দেওয়া হয়। প্রতিমাসে বেতনের মতো সেই টাকা গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেয় বনদপ্তর। সেই টাকা সদস্যদের মধ্যে ভাগ করে নিয়ে থাকি।’’