
কলকাতা, ২৯ ডিসেম্বর : দোরগোড়ায় ২০২৬ সাল, নতুন ইংরেজি বছরকে বরণ করে নেওয়ার পালা। তার আগে দেখে নেওয়া যাক, ২০২৫ সালে বিশ্বজুড়ে যে সমস্ত ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে আন্তর্জাতিক মঞ্চ। রাজনীতি, যুদ্ধ, বিজ্ঞান থেকে কূটনীতি-জেনে নেওয়া যাক ২০২৫-এর সাড়া জাগানো সব বড় মুহূর্ত।
ট্রাম্পের শুল্কনীতি: বছরের শুরুতেই আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি। চিনের ওপর ১০০ শতাংশ এবং ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন তিনি। ভারতের ক্ষেত্রে এই শুল্কের মধ্যে ২৫ শতাংশ ছিল রাশিয়া থেকে তেল কেনার শাস্তি। ট্রাম্পের এই আগ্রাসী অবস্থান আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে উত্তেজনা ছড়ায়। বিশেষ করে আমেরিকা, চিন ও রাশিয়ার মধ্যে শুল্কনীতি ঘিরে শুরু হয় নতুন করে ঠান্ডা লড়াইয়ের দর কষাকষি, যা বহু মানুষের মনে পুরনো কোল্ড ওয়ারের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে।
রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি ছিল সারা বছরই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে । ২০২২ সালে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ ২০২৫ সালেও থামেনি। প্রায় তিন বছর ধরে চলা সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন অসংখ্য মানুষ, ধ্বংস হয়েছে বিপুল সম্পত্তি। একাধিক দফায় আলোচনা হলেও স্থায়ী সমাধান এখনও অধরা। যুদ্ধ থামার আশা তৈরি হলেও তা বারবার হতাশায় বদলে গিয়েছে।
ইজরায়েল-হামাস শান্তি চুক্তি: একই সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে আলোচনায় আসে ইজরায়েল ও হামাস-এর মধ্যে শান্তি চুক্তির প্রসঙ্গ। ২০২৩-এর অক্টোবরে যখন হামাস ও প্যালেস্টাইনের অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো গাজা উপত্যকা থেকে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে 'অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড' নামে একটি বড় আকারের আক্রমণ শুরু করে। সংঘাতের আবহে শান্তির চেষ্টা চললেও পরিস্থিতি ছিল টানটান। ২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি ইজরায়েল এবং হামাস একটি প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময় চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল এবং ১৯ জানুয়ারি থেকে তা কার্যকর হয়।
পহেলগাম হামলা ও ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: দক্ষিণ এশিয়াতেও অশান্তি কম ছিল না। পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আরও তলানিতে ঠেকে। সেই আবহেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধ থামানোর দাবি সামনে আসে। যা নিয়ে ভারতে রাজনৈতিক বিতর্ক চলে।
ইরানের বিরুদ্ধে পরমাণু চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ: ইরানের বিরুদ্ধে পরমাণু চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ তোলে পশ্চিমী দেশগুলি। এর ফলে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে চাপ আরও বাড়ে। একই সঙ্গে নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘিরে বিতর্কে উঠে আসে ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেত্রীর নাম।
নেপালে জেন-জি আন্দোলন: বিভিন্ন দাবি ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যান করার প্রতিবাদে নেপালে জেন-জি আন্দোলন শুরু হয়। তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখায় তারা। কে পি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেন ৯ সেপ্টেম্বর, প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন সুশীলা কার্কি।
হংকংয়ে অগ্নিকাণ্ড: হংকং-এ আবাসনে ভয়াবহ আগুনে মৃত্যু হয় প্রায় ৩০০ জনের। ধোঁয়া, আতঙ্ক আর দগ্ধ ভবনের ছবি নাড়িয়ে দেয় গোটা বিশ্বকে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যু: প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ক্ষতবিক্ষত হয়েছে একাধিক দেশ। আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে তছনছ হয়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকা। ১০০০-এরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অংশে বন্যায় কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। চিনেও বন্যার প্রভাব পড়ে। আফ্রিকার ইথিওপিয়াতে ১২০০ বছর পর জেগে ওঠা আগ্নেয়গিরি নতুন করে আতঙ্ক ছড়ায়।
পাকিস্তান-আফগানিস্তান সম্পর্ক: দক্ষিণ এশিয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সমীকরণ পাকিস্তান আফগানিস্তান সম্পর্ক। তালিবান মন্ত্রীর ভারত সফরের পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি স্পষ্ট হয়। বাণিজ্যের পথ এখনও বন্ধ, উত্তেজনাও কাটেনি।
ব্রাজিলে মাদকচক্র: লাতিন আমেরিকায় নজর কাড়ে ব্রাজিলের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ পুলিশ অভিযান। মাদকচক্রের বিরুদ্ধে অভিযানে অন্তত ১২১ জনের মৃত্যু হয়। রিও ডি জেনেইরো-র রাস্তায় সারি সারি দেহ পড়ে থাকার ছবি গোটা বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়। দুই মাস ধরে পরিকল্পিত এই অভিযানে জঙ্গলে ফাঁদ পেতে ধরা হয় সন্দেহভাজনদের।
সুনীতা উইলিয়ামসের পৃথিবীতে ফেরা: এত অস্থিরতার মধ্যেও স্বস্তির খবর আসে মহাকাশ থেকে। নাসার মহাকাশচারী বুচ উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামস পৃথিবীতে ফেরেন। ত্রুটিপূর্ণ বোয়িং স্টারলাইনার যানে আট দিনের মিশন গিয়ে দাঁড়ায় ন’মাসে। শেষ পর্যন্ত ইলন মাস্কের স্পেস এক্স ক্যাপসুলে ফ্লোরিডার উপকূলে নিরাপদ স্প্ল্যাশডাউন তাঁদের ফেরা নিয়ে দীর্ঘ অনিশ্চয়তায় ইতি টানে।
দোষীসাব্যস্ত হাসিনা, মৃত্যুদণ্ডের সাজা: বাংলাদেশ ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত হন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়।
ফের অশান্ত বাংলাদেশ: ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদির মৃত্যুর ফের অশান্ত হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। বছরের শেষ মাসে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। সংবাদ পত্রের অফিস, দফতরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। নিশানায় ছিল ভারতীয় দূতাবাসও।
সিডনিতে সন্ত্রাসবাদী হামলা: সিডনির সৈকতে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারান কমপক্ষে ১৬ জন, এছাড়াও ৪৩ জন আহত হন। ইহুদিদের উদযাপনের মধ্যেই চলে এই জঙ্গি হামলা।
