দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: হাতের মেদ, বা হাতের অতিরিক্ত চর্বি, অনেকের জন্য একটি সাধারণ সমস্যা। এটি হাতের আঙুল, কনুই এবং অন্যান্য অংশে জমা হতে পারে, এবং সাধারণত স্থুলতা বা অপ্রতুল শারীরিক কার্যকলাপের কারণে হয়ে থাকে।তবে এই মেদ যে শুধু পেটে হয় তা নয়, অনেকসময় হাতে মেদের সৃষ্টি হয়। নারী কিংবা পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই এই সমস্যা দেখা যায়। যে কারণে হাতকাটা পোশাক পরতে অস্বস্তি বোধ করেন অনেকে। তবে, জীবনধারায় সামান্য কিছু বদল আনলে এবং নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করলে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
* হাতের মেদ কীভাবে জমে?
১) অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ: অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ করা এবং সে ক্যালোরি শারীরিক কার্যকলাপের মাধ্যমে খরচ না করা হলে তা শরীরের বিভিন্ন অংশে ফ্যাট হিসেবে জমে। হাতের মেদ বিশেষত বাহু, কনুই, এবং আঙুলের চারপাশে বেশি দেখা যায়।
২) কম শারীরিক কার্যকলাপ: যদি আপনি শারীরিক কার্যকলাপে (যেমন হাঁটা, দৌড়ানো বা ব্যায়াম) মনোযোগ না দেন, তাহলে শরীরের মেটাবলিজম ধীর হয়ে যায় এবং ফ্যাট জমে।বিশেষত হাতের মাংসপেশি যদি খুব বেশি সক্রিয় না হয়, তখন সেখানে অতিরিক্ত চর্বি জমা হতে পারে।
৩)বয়স এবং হরমোন: বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরে হরমোনাল পরিবর্তন ঘটে, যা মেদ জমানোর কারণ হতে পারে। বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনোপজের পর হরমোনের পরিবর্তনের কারণে হাতের মেদ বেড়ে যেতে পারে।
৪)জেনেটিক কারণ: অনেক সময়ে হাতের মেদ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে পাওয়া যেতে পারে। এটি জেনেটিক হতে পারে, যেখানে কিছু মানুষের শরীরের বিশেষ অংশে মেদ জমে বেশি।
* নিম্নলিখিত ব্যায়ামগুলি অনুসরণ করু্রুনঃ
১)আর্ম সার্কলিং: প্রথমে একটি চেয়ারে সোজা হয়ে বসুন। হাত দু’টি দু’পাশে কাঁধ বরাবর টান টান ভাবে তুলুন। এ বার একসঙ্গে দু’টি হাত ঘড়ির কাঁটার দিকে ১৬ বার ঘোরান। কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করে ঘড়ির কাঁটার উল্টো দিকে ঘোরান ১৬ বার। ব্যায়ামটি দু’-তিন বার করা যেতে পারে।
২)পেক ডেক: প্রথমে হাতের মুঠো বন্ধ করুন। হাত দু’টি ভাঁজ করে মুখের সামনে সোজাসুজি রাখুন। সে অবস্থাতেই হাত দু’টি দু’পাশ দিয়ে পিছনে নিয়ে যান। এই অবস্থায় দশ পর্যন্ত গুনুন। তার পরে হাত দু’টি আবার সামনের দিকে আনুন। এ ভাবে চার-পাঁচ বার ব্যায়ামটি করা দরকার।
৩)পুলিং অফ আর্মস ব্যাকওয়ার্ডস: প্রথমে সোজা হয়ে চেয়ারে বসুন। টান টান করে একটি হাত মুঠো করে উপরের দিকে তুলুন। এ বার হাতে হালকা চাপ পড়বে, এমন ভাবে সেটিকে টান টান করে পিছন দিকে ঠেলার চেষ্টা করতে হবে।এই অবস্থাতেই দশ অবধি গুনুন। দু’হাতে চার বার করে এই ব্যায়ামটি করা যেতে পারে। সৌমেনের মতে, বাহুমূলের মেদ ঝরাতে সবচেয়ে বেশি কার্যকর ব্যায়ামগুলির মধ্যে এটি একটি।
৪) ডাউনওয়ার্ড ফেসিং ডগ: সোজা হয়ে দাঁড়ান। হাত দু’টি টান টান করে উপরের দিকে তুলে ধীরে ধীরে নামিয়ে মাটিতে ভর দিন। এই অবস্থায় শরীরটি ত্রিভুজের মতো দেখাবে। এ বার ওই অবস্থাতেই কোমরটি কিছুটা নীচের দিকে ঠেলুন।ব্যায়ামটি করার সময় দশ পর্যন্ত গুনে কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করুন। দিনে চার-পাঁচ বার করা যায় এটি।
৫)পুশ আপ: নানা কারণে এই ব্যায়ামটি ভীষণ পরিচিত। ব্যায়ামটি হাত ও বাহুমূলের পাশাপাশি পুরো শরীরেরই মেদ ঝরাতে কাজে লাগে। ব্যায়ামটি করার জন্য প্রথমে উপুড় হয়ে শুতে হবে ম্যাট বা কোনও শক্ত জায়গার উপরে।পা দু’টির মধ্যে কিছুটা দূরত্ব থাকবে। শরীরকে টান টান রেখে হাত ও পায়ের আঙুলের উপরে ভর দিয়ে তা তুলতে হবে কিছুটা। মনে রাখবেন, শরীরের ভার যেন হাতের উপরেই বেশি পড়ে। ব্যায়ামটি করার সময়ে আট পর্যন্ত গুনবেন। দিনে তিন-চার বার ব্যায়ামটি করা যেতে পারে।
* হাতের মেদ কমাতে সময় এবং ধৈর্য:
হাতের মেদ কমানো একটি ধীর প্রক্রিয়া হতে পারে, তবে সঠিক ডায়েট এবং নিয়মিত ব্যায়াম অনুসরণ করলে আপনি লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রচেষ্টা এবং ধৈর্য প্রয়োজন।
অবশেষে, হাতের মেদ কমানোর জন্য আপনার খাবার এবং ব্যায়াম রুটিন পরিবর্তন করা গুরুত্বপূর্ণ, এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য এটি একটি প্রক্রিয়া।