দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক; প্যারেন্টিং মানেই দায়িত্ব, ভালোবাসা আর একরাশ উদ্বেগ। ডিজিটাল যুগে সেই দায়িত্ব যেন আরও জটিল হয়েছে। শিশুরা বড় হবার আগেই চোখে পড়ে যায় ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক বা অন্যান্য সোশাল মিডিয়ার রঙিন দুনিয়া। অনলাইন ক্লাস, হোমওয়ার্ক, পড়াশোনা করতে করতে কখন যে তারা ঢুকে পড়ে ভার্চুয়াল এক জগতে—বুঝে ওঠার আগেই তা অভ্যাসে পরিণত হয়। কিন্তু এই ভার্চুয়াল দুনিয়ার আলোর নিচে যেমন আছে বিনোদন ও শেখার সুযোগ, তেমনই অন্ধকার কোণে লুকিয়ে রয়েছে হ্যাকিং, সাইবার বুলিং, পরিচয় চুরি, মানসিক চাপের মতো ভয়ানক ফাঁদ। তাই অভিভাবকদের এখন শুধু প্রযুক্তি দিলেই চলবে না, শেখাতে হবে ‘ডিজিটাল ডিসিপ্লিন’।
সন্তান সোশাল মিডিয়া ব্যবহার শুরুর আগে যে বিষয়গুলোতে নজর দেওয়া জরুরি:
১. যে যা বলছে তার সবটা সত্যি নয়- ছোটোরা সহজেই সব কিছু বিশ্বাস করে। কিন্তু সোশাল মিডিয়ায় বিশ্বাস করলে তার মাশুল দিতে হতে পারে কয়েকগুণ। নিজের পরিচয়, বাসস্থান বা অন্য কোনও বিষয়ে ওপ্রান্তের মানুষটি যা বলছে, তা সবসময় বিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই। অত্যন্ত সুন্দর আচরণের পিছনে লুকিয়ে থাকতে পারে খারাপ কোনও উদ্দেশ্য। তাই কারও সঙ্গে কথা বললে সতর্ক থাকতে হবে। কারও ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করলেও ভাবনাচিন্তা করেই করতে হবে।
২. ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট- সোশাল মিডিয়া পোস্ট কিন্তু মুখের কথা নয়, এর প্রভার সুদুর প্রসারী। থেকে যায় প্রমাণ। আজ যা পোস্ট করবে, বা যে পোস্টে কমেন্ট, লাইক বা শেয়ার করবে তা থেকে যাবে আজীবন। আজ যা ঠিক মনে হচ্ছে, আগামিকাল তার জন্য অনুশোচনা হতেই পারে। তাই নেটদুনিয়ায় যা কিছু করার আগে হাজারবার ভাবতে হবে।
৩. অনলাইন অবতারের পিছনে রক্তমাংসের মানুষই- বর্তমান সময়ের একটা বড় সমস্যা হল সাইবার বুলিং। উলটোদিকের মানুষটাকে কিছু বলার আগে মাথায় রাখতে হবে, এমন কিছু বলা যাবে না যা তাকে আঘাত করে।
৪. নিরাপত্তাহীন মনে হলেই অভিভাবকদের জানানো- সন্তানদের বন্ধু হয়ে ওঠার চেষ্টা করুন। ওদের বোঝান, কী হয়েছে তা বড় বিষয় না। কোথায় সমস্যা হলে বা নিরাপত্তাহীন মনে হলেই অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলা আবশ্যক। অভিভাবকরা বকবেন তা ভেবে দূরে সরে না থেকে সমস্যা খোলাখুলি বলতে হবে।
৫. ব্যক্তিগত তথ্য লেনদেন নয়- অনলাইল সেফটির প্রথম শর্তই হল, ব্যক্তিগত তথ্য কারও কাছে দেওয়া যাবে না। পুরো নাম, ঠিকানা, স্কুলের তথ্য বা বাবা-মায়ের তথ্য, কিছু যেন ভুলেও সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার না করে খুদে।
মনোবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, অতিরিক্ত সোশাল মিডিয়া ব্যবহার ১০-১৬ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে উদ্বেগ, আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ও একাকীত্বের প্রবণতা বাড়িয়ে তোলে। শুধু তা-ই নয়, অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম ঘুমের ব্যাঘাত ও চোখের সমস্যা তৈরি করতে পারে।