দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ এসএন ব্যানার্জি রোডে কলকাতা পুরসভার সদর দপ্তরের দোতলার বারান্দায় হারানো বাসা খুঁজে বের করে ডিম পেড়েছে টুনটুনি! টুনটুনির এই কীর্তি পুরকর্মীদের নজরে এসেছে ক’দিন আগেই। টুনটুনি দম্পতি দোতলার ওই বারান্দায় টবে রাখা একটি যজ্ঞডুমুরের গাছে বাসা তৈরি করেছে। চারটি ডিমও রয়েছে সেই বাসায়। ডিমগুলির উপরে সারাদিন নজর রাখছে ওই টুনটুনি দম্পতি। কলকাতা পুরসভার সদর দপ্তরের উল্টো দিকে নিউ মার্কেট লাগোয়া চ্যাপলিন স্কোয়্যারে রয়েছে পুরসভার একটি নার্সারি। খানে হরেক গাছের পরিচর্যা হয়। টবের সেই গাছ দিয়েই সাজানো হয় পুরসভার সদর দপ্তরের দোতলার বারান্দা।
শহরের প্রাণকেন্দ্র, চ্যাপলিন স্কোয়্যারের এই বাগানে বাড়ছে টুনটুনি-সহ একাধিক পাখির আনাগোনা। টবের গাছে তারা বাসাও তৈরি করছে। পুরকর্মীরা জানাচ্ছেন, চ্যাপলিন স্কোয়্যারের ওই বাগান থেকেই সম্প্রতি পুরসভার সদর দপ্তরে আনা বেশ কয়েকটি টবের গাছের পাতায় ছোট-ছোট ফুটো দেখতে পান তাঁরা।
পুরকর্মীরা মনে করছেন, বাসা তৈরির জন্য টুনটুনি ঠোঁট দিয়ে পাতায় ওই ফুটো করেছে। তার মধ্যে একটি গাছে বাসা বেঁধেছিল টুনটুনি। পুরকর্মীরা জানিয়েছেন, চ্যাপলিন স্কোয়্যারে থাকাকালীন ওই বাসা খালিই ছিল। ওই গাছের টব পুর-অফিসে উঠে আসার পরে দিন কয়েক আগে হারানো বাসা খুঁজে পেয়ে তাতে ডিম পেড়ে যায় মা টুনটুনি।
এক পুরকর্মীর কথায়, ‘বর্ষায় টুনটুনি বাসা বেঁধে সেখানে ডিম পাড়ে। সাধারণত টুনটুনি বাসা বাঁধার জন্য ডুমুর জাতীয় চওড়া গাছের পাতা পছন্দ করে।’ কিন্তু চ্যাপলিন স্কোয়্যারে টবে থাকা ওই যজ্ঞডুমুরের গাছ পুরসভার বারান্দায় উঠে আসার পরে হারানো বাসা খুঁজতে-খুঁজতে টুনটুনি দম্পতির উড়ে আসার ঘটনা বিরল বলেই জানাচ্ছেন পুরকর্মীরা। সেখানেই টুনটুনি দম্পতি ফিরে পেয়েছে সাধের সেই বাসা।
পক্ষী বিশেষজ্ঞ এবং প্রকৃতি সংসদের সহসম্পাদক অপূর্ব চক্রবর্তী বলছেন, ‘হারানো বাসা খুঁজে বের করে ডিম পাড়া টুনটুনির মতো ছোট পাখির স্বভাবের সঙ্গে মেলে না। যদি এমন হয়, তাকে বিরল ঘটনা বলেই ধরতে হবে।’ তাঁর সংযোজন, ‘টুনটুনিরা বাসা বাঁধার জন্য পছন্দ করে গাছের নরম পাতা। বাসার ক্ষতি হলে বা হারিয়ে গেলে খোঁজার চেষ্টা তারা সাধারণত করে না। নতুন বাসা বেঁধে নেওয়াই তাদের রেওয়াজ। কাক, চিল, ঈগলের মতো বড়, শক্তিশালী ও সাহসী পাখিকে দেখা যায় অনেক সময়ে ঝড়ে পড়ে যাওয়া বাসা গাছে তুলে দিলে সেই বাসা মেরামত করে নিয়ে তাতে ডিম পাড়ে এবং বাচ্চাকে খাওয়ায়।’
সেই কারণেই কলকাতা পুরসভায় যে ঘটনা ঘটেছে, সেটা টুনটুনির জীবনচক্রে ব্যতিক্রমী ঘটনা বলে মনে করছেন তিনি। পুরকর্মীরা জানান, পুরসভার সদর কার্যালয়ের সামনেই রয়েছে বিরাট একটি অশ্বত্থ গাছ। দিনে টুনটুনি দম্পতি ওই গাছের ডালে বসে পাতার আড়াল থেকে বাসা পাহারা দেয়। দু’জনেই পালা করে মাঝেমধ্যে উড়ে এসে দেখে যায়, টবে যজ্ঞডুমুর গাছের বাসায় থাকা ডিমগুলি ঠিক আছে কি না। সন্ধেয় যখন পুরসভার বারন্দার সব আলো নেভে, তখন টুনটুনি দম্পতি সেই বাসায় ফিরে আসে।
এক পুরকর্মী বলেন, ‘মালিরা কোনও গাছ বাগান থেকে পুরসভায় বারান্দায় আনার সময়ে যদি দেখেন, কোনও গাছে পাখির বাসা রয়েছে, সেই গাছ তাঁরা বাগানেই রেখে দেন, যাতে পাখিগুলির কোনও সমস্যা না হয়। এক্ষেত্রে হয়তো কোনওভাবে নজর এড়িয়ে যজ্ঞডুমুর গাছের টবটি নিয়ে আসা হয়েছিল।’