দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: পুজো মানেই বাঙালির কাছে ভ্রমণ, আড্ডা আর নানা রকমের খাবারের আনন্দ। সেই উৎসবের আবহে নতুন মাত্রা যোগ করতে হাজির হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল রাজবাড়ি। এ বছর পুজোয় এখানে শুধুই প্রতিমা দর্শন নয়, দর্শনার্থীদের জন্য থাকছে রাজকীয় আবহে রাজবাড়িতে রাত্রিবাস, সুস্বাদু ভোজ এবং আশপাশের দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার বিশেষ আয়োজন।
১৭৭৮ সাল থেকে রানি জানকীর হাতে শুরু হওয়া মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজো আজও প্রাচীন রীতি মেনেই হয়। মহালয়ার পরের দিন, অর্থাৎ প্রতিপদ থেকেই শুরু হয়ে যায় পুজোর নানা আচার অনুষ্ঠান। তবে সময়ের সঙ্গে জৌলুস কিছুটা কমলেও, ঐতিহ্যে কোনও ভাটা পড়েনি। এই ঐতিহ্যকে কেন্দ্র করেই চলতি বছরে পর্যটকদের জন্য নতুন ব্যবস্থার আয়োজন রাজ পরিবারের।
রাজাদের আমলে ব্যবহৃত পালঙ্কে রাত্রিযাপন এবং কাঁসার থালায় রাজকীয় খাবার পরিবেশন পুজোর সময়ে পর্যটকদের এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা দেবে। রাজ পরিবারের সদস্য হরপ্রসাদ গর্গ বলেন, ‘পর্যটকদের জন্য এখানে তিন ধরনের রুমের ব্যবস্থা আছে। যার ভাড়া শুরু ২,০০০ টাকা থেকে। প্রতিটি রুমে এসি, টিভি এবং আলাদা বাথরুমের সুবিধা রয়েছে।’ পর্যটকদের সুবিধার্থে রাজবাড়িতে রাত্রিযাপনের জন্য আগে থেকে বুকিং করে আসা প্রয়োজন (যোগাযোগ: ৯৮৩০২৭৫৯২৮)।
ষোড়শ শতাব্দীতে জনার্দন উপাধ্যায় তিনটি রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন: রঙ্গিবসান, লালকুঠি এবং ফুলবাগ। রঙ্গিবসান এবং লালকুঠিতে পর্যটকদের প্রবেশের অনুমতি নেই। দুর্গাপুজো হয় রঙ্গিবসান প্যালেসের ঠাকুর দালানে। আর ফুলবাগ হলো মহিষাদল রাজবাড়ি। সেখানে যেতে পারেন সাধারণ পর্যটকরা। এখানে কড়িকাঠের ছাদ, ঝাড়বাতি, খড়খড়ি, পুরোনো আসবাব, দুর্গা মন্ডপ, কামান সব কিছু দেখা যায়। এ ছাড়াও, রাজবাড়ির জাদুঘরে রাজাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও শিকার করা পশুপাখির দেহাবশেষ সংরক্ষিত আছে।
শুধু রাজবাড়ি নয়, পর্যটকরা চাইলে আশেপাশে থাকা ঐতিহাসিক স্থানগুলোও ঘুরে দেখতে পারবেন। যেমন: গান্ধী কুটির, পর্তুগাল পাড়া, ত্রিবেণী সঙ্গম, এবং সতীশ সামন্তের জন্মভিটে। এই সব জায়গা ঘোরার জন্য রাজবাড়ির পক্ষ থেকে বিশেষ প্যাকেজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়াও, মহিষাদল রাজবাড়ির পাশেই রয়েছে ‘রাজার হালে’ রেস্তোরাঁ। সেখানে বাঙালি, চাইনিজ় এবং অন্যান্য নানা ধরনের খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে।
কলকাতা থেকে মাত্র ১১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই রাজবাড়ি সড়কপথে সহজেই পৌঁছনো যায়। দিঘা আসার পথে নন্দকুমার মোড় পার করে কাপাসিরিয়া মোড় থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার গেলেই মহিষাদল রাজবাড়ি। ট্রেনে আসতে চাইলে হাওড়া থেকে মহিষাদল স্টেশনে নেমে গাড়িতে রাজবাড়ি যাওয়া যায়। বর্তমানে এই রাজবাড়ির দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে গর্গ পরিবার। রাজবাড়ির কনিষ্ঠ সদস্য রুদ্রপ্রসাদ গর্গ বলেন, ‘সারা বছর তো বটেই, তবে পুজোর সময় ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো।’