Country

2 hours ago

Pune RFD Project: প্রকৃতি কি হার মানছে উন্নয়নের কাছে? পুনেতে বিতর্ক তুঙ্গে!

KP, Boat Club Road residents raise  water level
KP, Boat Club Road residents raise water level

 

দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: পুনে শহরের অন্যতম অভিজাত এলাকা বোট ক্লাব রোড ও কোরেগাঁও পার্কে বসবাসকারী নাগরিকদের মধ্যে সম্প্রতি ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কারণ, বর্ষার জলে মুলা-মুথা নদীর জলস্তর দ্রুত বাড়ছে, আর সেই সঙ্গে বাড়ছে জলমগ্নতার আশঙ্কাও। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী শহরের বহু  আলোচিত রিভারফ্রন্ট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প (RFD) যা নদীর প্রাকৃতিক গতিপথ ও প্রস্থকে সংকুচিত করে ফেলেছে।  

গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণের ফলে নদীর জলস্তর অস্বাভাবিক হারে বাড়তে শুরু করে। একই সময়ে RFD প্রকল্পের অংশ হিসেবে নদীর ধার বরাবর বাঁধ এবং কাঠামোগত বাধা তৈরি হওয়ায় নদীর জল নির্গমনের স্বাভাবিক পথ সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। এর ফলস্বরূপ, বোট ক্লাব রোড, নর্থ মেইন রোড এবং পার্শ্ববর্তী বহু আবাসিক কমপ্লেক্সের নিচতলা ও পার্কিং এলাকায় জল জমে যায়। এমনকি কোরেগাঁও পার্কের নিকটস্থ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া কেন্দ্রও আংশিকভাবে জলের নিচে চলে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন, যদি আরও বৃষ্টি হয় বা নদীর প্রবাহে কোনও বাধা ঘটে, তবে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। অনেকে অভিযোগ করছেন যে প্রশাসন নদী বাঁধতে গিয়ে জলস্তর নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে নতুন বিপদের সৃষ্টি করেছে। প্রাকৃতিক জলপ্রবাহের গতি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় জল এখন আবাসিক এলাকায় ঢুকে পড়ছে, জনজীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে।   

পরিবেশবিদদের মতে, রিভারফ্রন্ট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প শহরের পরিবেশের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাঁরা বলছেন, নদীর ধারে যেসব প্রাকৃতিক জায়গা ছিল, সেগুলোর জায়গায় এখন কংক্রিট দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এতে নদীর স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। ফলে বর্ষার সময় নদী অতিরিক্ত জল ধরে রাখতে পারছেনা এবং জলাবদ্ধতা বা বন্যার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। পরিবেশবিদেরা মনে করেন, নদীর ধারে গাছপালা, খোলা জায়গা এবং জল জমে থাকার মতো প্রাকৃতিক এলাকা থাকলে এই জল সহজে শুষে নেওয়া সম্ভব। তাই তাঁরা পরামর্শ দিয়েছেন—নদীর পাশে সবুজ জায়গা রেখে প্রকৃতির মতোই নদীর পরিবেশ তৈরি করা হোক। এই প্রসঙ্গে শহরের পুর প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বর্ষার পরে নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলোকে পুনঃউন্নয়ন করা হবে এবং জলনিকাশী ব্যবস্থা আরও কার্যকর করা হবে। শহরের প্রকৌশলী বিপিন শিন্দে বলেছেন, “আমরা জানি কিছু এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হওয়ার পর এই সমস্যাগুলির স্থায়ী  সমাধান হবে।” 

‘জীবিতনদী’ নামে একটি শহরভিত্তিক পরিবেশবাদী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা শৈলজা দেশপাণ্ডে বলেন, নদী উন্নয়নের কাজ রিভারফ্রন্ট (RFD) প্রকল্পের মাধ্যমে করা হলেও, সেটা ঠিকভাবে হয়নি। তাঁর মতে, যেভাবে একটি সেতু নদীর দুই তীরের বাইরে তৈরি হয়, ঠিক সেভাবেই এই বাঁধগুলোও নদীর তীর থেকে একটু দূরে, বাইরে তৈরি করা উচিত ছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বাঁধগুলো নদীর স্বাভাবিক তীর দখল করে তৈরি হয়েছে, যা ঠিক হয়নি। তিনি সতর্ক করে বলেন, এই বিষয়টি অবহেলা করলে নদীর জলস্তর আরও বাড়বে এবং সমস্যা তৈরি হবে। তিনি আরও বলেন, নদীর জল ধারণক্ষমতা, গতি ও জলের উচ্চতা ভালোভাবে হিসাব না করলে নদীর জল উল্টো দিকে ফিরে এসে শহরে জলাবদ্ধতা বা বন্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই নগর বন্যা রোধে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এর জন্য শহর কর্তৃপক্ষকে (পুনে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন) নদীর ধারে এমন কিছু এলাকা তৈরি করতে হবে, যেগুলো অতিরিক্ত জল শোষণ করতে পারে — যেমন খোলা সবুজ জায়গা, জলাভূমি বা ‘স্পঞ্জ জোন’ এক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী হবে। 

উল্লেখ্য, পুনে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে প্রায় ₹৫,৫০০ কোটির এই রিভারফ্রন্ট প্রকল্পটি চালু করা হয়েছে। এর আওতায় প্রায় ৪৪ কিলোমিটার নদীতীর উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। যদিও প্রশাসন দাবি করছে যে এটি নদীভাঙন রোধ, সৌন্দর্যায়ন ও পর্যটন উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত জরুরি, তবে অনেকেই প্রশ্ন  তুলেছেন—এই উন্নয়ন প্রকল্প আদতে কতটা টেকসই এবং শহরের জন্য নিরাপদ! এমতাবস্থায়, শহরজুড়ে বিতর্ক তুঙ্গে। পরিবেশবিদ, সাধারণ মানুষ ও  নাগরিক সংগঠন চাইছেন যে নদীকে যেন তার স্বাভাবিক গতিপথে চলতে দেওয়া হয়। তাঁরা বলছেন, প্রকৃতির নিয়ম মেনে চললেই শহরের জন্য ভালো হবে এবং বিপদ কমবে। আসন্ন বর্ষার দিনগুলিতে প্রশাসনের তরফ থেকে বন্যা রোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয় সেদিকেই তাকিয়ে গোটা শহরবাসী। 


You might also like!