দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্থানের তালিকায় রয়েছে অসমের কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান। গা ছমছম পরিবেশ আর বন্যপ্রাণ চাক্ষুস করতে কাজিরাঙা ভ্রমণে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন পর্যটকরা। বিখ্যাত এই জঙ্গলের সীমানায় এবার তৈরি হবে আস্ত একখান পাঁচতারা হোটেল? হাতিদের করিডোরে পড়বে শহুরে ছাপ? একটি প্রস্তাব ঘিরে তৈরি হয়েছে জোর বিতর্ক।
সম্প্রতি কাজিরাঙার জঙ্গলের সীমানা ঘেঁষে পাঁচতারা হোটেল তৈরির প্রস্তাবের একটি খবর রটে যায়। যা নজরে পড়ে ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন মনুমেন্টস অ্যান্ড সাইটস (ICOMOS) এবং ইন্টারন্যাশনাল কালচারাল ট্যুরিজম কমিটি এবং ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অন ইন্টানজিবল কালচারাল হেরিটেজের বিশেষজ্ঞ ড. সঞ্জীব কুমার বরকাকোটির। জঙ্গলের সীমানায় পাঁচাতারা হোটেল তৈরি হলে স্বাভাবিক জীববৈচিত্রের ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
এই মর্মে অসমের ট্যুরিজম বিভাগের ডিরেক্টরকে একটি চিঠি লেখেন ড. সঞ্জীব কুমার বরকাকোটি। নর্থ ইস্ট নাও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যাচ্ছে, হাতিকুলি ইংলায় পোথারে হাতিদের স্বাভাবিক চলাফেরা বিঘ্নিত হতে পারে বিলাসবহুল হোটেল নির্মাণে। এই আশঙ্কার কথা বিশেষজ্ঞ চিঠিতে উল্লেখ করেছেন।
ভারতের একটি নামজাদা সংস্থার পক্ষ থেকে দু'টি এবং শিকাগোর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে অপর একটি ভারতীয় সংস্থা তিন নম্বর হোটেলটি তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে বলেও উল্লেখ রয়েছে ওই চিঠিতে। হোটেলগুলি কাজিরাঙা জঙ্গলের সীমানের মধ্যে হাতিকুলি ইংলায় পোথার এলাকায় তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, কাজিরাঙার এই হাতিকুলি ইংলায় পোথার এলাকা হাতিদের করিডোর হিসেবেই পরিচিত। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, হাতিরা এই এলাকায় নিজেদের মতো করে চলাফেরা করে। এটিকে হাতিদের প্লেগ্রাউন্ড বলে উল্লেখ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে চিঠিতে।
সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ ড. সঞ্জীব কুমার বরকাকোটি জীববৈচিত্র বজায় রাখা, বাস্ততন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির পক্ষে জোরাল সওয়াল করেছেন চিঠিতে। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আশ্বাস চেয়েছন, অদূর ভবিষ্যতে কাজিরাঙার চৌহদ্দিতে যদি এমন পাঁচতারা হোটেল তৈরি হয়ও তবে সে ক্ষেত্রে হাতি কিংবা অন্য বন্যপ্রাণের যাতে ক্ষতি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। তাঁর বক্তব্য, 'আমরা উন্নয়নকে স্বাগত জানাচ্ছি তবে তা কখনওই প্রকৃতির বলি দিয়ে হওয়া উচিত নয়।'
এখনও পর্যন্ত অফিসিয়ালি কাজিরাঙার চৌহদ্দিতে পাঁচতারা হোটেল নির্মাণের কোনও বিবৃতি মেলেনি। এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে। সে ক্ষেত্রে নির্মাণকাজের আগে বাস্ততন্ত্র এবং পরিবেশ রক্ষার বিষয়গুলি নিয়ে যথাযথ আলোচনা হবে বলেই অনুমান করছেন পরিবেশবিদ এবং বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞরা।