কলকাতা, ১ এপ্রিল : অনুষ্ঠানের শুরুতে মঞ্চে সঙ্গীতশিল্পী ও সহ শিল্পীদের সমন্বয়ের জন্য কত সময় লাগা আবশ্যিক? তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে সামাজিক মঞ্চে। এ নিয়ে গানের জগতে অতি পরিচিত দু’জন পৌষালি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ইমন চক্রবর্তী প্রকাশ্যে দাবি করেছেন। অনেক সময়ই শিল্পী বা মিউজিশিয়ানরা অনুষ্ঠানের আগে শব্দের চরিত্র পরীক্ষা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন। পর্যাপ্ত সময় পান না বা সেই সময় তাঁদের দেওয়া হয় না। অতি সম্প্রতি তা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ভিডিয়ো পোস্ট করে কড়া বার্তা দিয়েছেন পৌষালি। সারেগামাপা খ্যাত সেই গায়িকার প্রতিটি কথাকে সমর্থন করেছেন ইমন চক্রবর্তী। এই দুই গায়িকাকে যাঁরা চেনেন তাঁরা জানেন দুই গায়িকা বরাবরই স্পষ্টবক্তা। ভুল বা অন্যায় কিছু ঘটলে তৎক্ষণাৎ সেটার প্রতিবাদ করেন।
পৌষালিকে শো বা কনসার্ট আয়োজকদের উদ্দেশ্যে বলতে শোনা গিয়েছে, 'একটা অনুষ্ঠান তৈরি করতে অনেক পরিশ্রম আছে। কমিটিরও আছে। শিল্পীরও আছে। ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। যে কোনও কাজ একার পক্ষে সম্ভব না। একটা কমিটি, একটা সংস্থা অনেক টাকা খরচ করে অনেক ভাবে টাকার জোগাড় করে একটা শিল্পীকে নিয়ে আসে। এবং আশা করেন আজকে একটা দারুণ সন্ধ্যা কাটাব। আর কোনও উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু সেই শিল্পীর টিমকে বা মিউজিশিয়ানদের সাউন্ড চেক করতে সময় না দেওয়া হয় তাহলে তো সেই আশা করাই উচিত না।'
তিনি বলেন, 'আমি আমার একার কথা বলছি না। আমি সমস্ত শিল্পী, মিউজিসিয়ান যাঁরা এই চরম ভোগান্তির শিকার হন তাঁদের সবার হয়ে বলছি। অনেকেই বলেন সাউন্ড চেক কী, সাউন্ড চেক করতে দেব না। সাউন্ড চেকের মাধ্যমে দেখা হয় যে সমস্ত বাদ্যযন্ত্র ঠিকঠাক বাজছে কিনা, আপনারা ঠিকঠাক শুনছেন কিনা, সব কিছু ব্যালেন্স, মিক্স হয়ে কানে আসে। এটা করতে অনেক সময় লাগে। অতিরিক্ত সময়ের কথা বলছি না। কিন্তু মিনিমাম দেড় দুই ঘণ্টা লাগে।'
গায়িকার কথায়, 'বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে করছে বলেই কেন সেটা হতে দেরি হচ্ছে কেন বললে হবে না। চালে ডালে বসিয়ে দিলেই খিচুড়ি হয় না। ঠিক তেমন করেই ১০ মিনিটে সাউন্ড চেক হয় না। কেন আপনারা এটা বোঝেন না? আমি এই ভিডিয়োর মাধ্যমে অনুরোধ করছি, এটা একটা অঙ্ক, অনুষ্ঠানের মূল শিরদাঁড়া। এটাকে সময় না দিলে অনুষ্ঠানটা খারাপ হবে। সাউন্ড চেকের এই সময়টা শিল্পীকে দিতে হবে।'
ইমন চক্রবর্তী পৌষালি বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভিডিয়ো শেয়ার করেন। লেখেন, 'দিয়েছে আচ্ছা করে। ধন্যবাদ পৌষালি।' কেবল ইমন নন। একাধিক সঙ্গীতশিল্পীই জানিয়েছেন তাঁরাও অনেক সময় এই একই সমস্যায় পড়েন। দুই শিল্পীর সমর্থনে মন্তব্য করেছেন অনেকে। এ নিয়ে প্রকাশিত খবরে মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০টা পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া এসেছে ৫০টি। যেমন,স্মৃতি সামন্ত লিখেছেন, “একদম সঠিক কথা” বিপরীতের পাল্লও কম ভারি নয়। কৌশিক ঘোষ লিখেছেন, সমস্যা টা হলো এখনকার প্রায় সব শিল্পীরাই যন্ত্রনির্ভর। সেই কৃত্তিম মিক্স আপ করে শব্দ প্রক্ষেপ করা হয়। হেমন্ত - সন্ধ্যা- মান্না - মানবেন্দ্র - শ্যামল - অখিলবন্ধু - প্রতিমা ইত্যাদি এইরকম আরো অসংখ্য কিংবদন্তি শিল্পীদের গান একদম সামনে থেকে শোনার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে প্রযুক্তির এত সুবিধা না পেয়েও তিন চারটি বাজনার সঙ্গে যা পরিবেশনা করতেন সেটা এই বয়সে পৌঁছেও কানে অনুরণন হয়। সুতরাং......, আর কিছু বোধহয় না বলাই ভালো। কারণ টা ঠিক কি বলে আপনার মনে হয়? পর্যাপ্ত রেওয়াজের অভাব? এই প্রশ্ন তুলে কৌশিকবাবু নিজেই লিখেছেন, “নিঃসন্দেহে। অল্প সময়ের মধ্যে যশ লাভের চেষ্টা। ফলে পরিবেশনায় চটকদারিত্ব। দেখবেন এদের শিল্পী জীবনও খুব দীর্ঘ হয় না।”
সুব্রত সিনহা লিখেছেন, “সত্য বলেছেন কিন্তু আরেকটা দিক তুলে ধরেন নি। আড়াই ঘন্টার প্রোগ্রামের কথা বলে প্রায় দু'ঘণ্টা ধরে মিউজিক সেট করে আধ ঘন্টার প্রোগ্রামের জন্য কেউ কিন্তু শিল্পীকে নিয়ে আসেন না।” হরিমোহন দাস লিখেছেন, “অনুষ্ঠানের যে সময় দেওয়া হয় এই সময় আপনারা এসে সাউন্ড চেক করেন। তাতে দর্শক ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলেন। আর ইমন তো সব কিছুতেই কথা বলে পপুলার হতে চায়।” কেয়া ব্যানার্জী লিখেছেন, “একদম ঠিক কথা। শুধু নিজেকে জাহির করা!”